ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান
এ বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে পাঠকের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান
আমার বিয়ে হয় প্রায় ২০ বছর আগে। আমার স্বামী ব্যবসায়ী। দুই সন্তান, এক ছেলে, এক মেয়ে। দু’জনই কলেজে পড়ছে। বিবাহিত জীবনে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক কখনোই খুব ভালো ছিল না। ছোটখাটো মনোমালিন্য লেগেই থাকে। তবে তেমন গুরুতর সমস্যা হয়নি। এরই মধ্যে গত বছর পাঁচেক ধরে আমার স্বামী সপ্তাহে দুই-তিন দিন বাড়ির বাইরে থাকেন। ২০১৯ সালে জানতে পারি তিনি একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে গেছেন। তবে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ কথা অস্বীকার করেন।
সম্প্রতি জানতে পারি, কয়েক বছর আগেই তিনি মেয়েটিকে গোপনে বিয়ে করেছেন এবং সেই ঘরে তাঁর তিন বছর বয়সী একটি সন্তান আছে। একটা সুশ্রী, শিক্ষিত মেয়ে; যার বয়স আমার স্বামীর অর্ধেক হবে– সে আমার স্বামীর প্রথম বিয়ে ও সন্তানদের কথা জেনেও এই সম্পর্কে জড়িয়েছে এবং তাকে বিয়ে করেছে। আমার স্বামী আমাদের জানিয়েছেন, আমার সন্তানদের প্রতি সব দায়িত্ব তিনি পালন করবেন। তবে এও জানিয়েছেন, মেয়েটিকে ভালোবাসেন এবং ওই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন না। একই শহরে আমার স্বামী আলাদা বাসায় দুই পরিবারকে রেখেছেন। বেশিরভাগ সময় ওই মেয়েটির সঙ্গেই থাকেন। এসব ঘটনা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। আমি মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়ি।
আমাকে না জানিয়ে, অনুমতি না নিয়ে করা দ্বিতীয় বিয়ে কি বৈধ হবে? ওই ঘরে যে সন্তানের জন্ম হয়েছে, সে কি আমার স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকার পাবে? বিস্তারিত পরামর্শ চাইছি।
যদিও মুসলিম শরিয়ত অনুযায়ী, পুরুষরা একাধিক বিয়ে করতে পারেন; তবু একটি আধুনিক সমাজের বাস্তবতার নিরিখে শৃঙ্খলা বজায় রেখে বিবাহিত জীবনের প্রতিষ্ঠানটা চালানোর স্বার্থে মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১ পাস করা হয়। এ আইন অনুযায়ী, একজন পুরুষের দ্বিতীয় বিয়ে করার আগে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। তাছাড়া মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১-এর ধারা ৬ অনুযায়ী, যিনি দ্বিতীয় বিয়ে করতে চান তাঁকে প্রথম স্ত্রীর অনুমতির সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি সালিশি পরিষদ গঠন করার অনুরোধ করে দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য লিখিত আবেদন করে অনুমতি চাইতে হবে। তখন স্থানীয় পরিষদের সালিশ বসবে আর সেই সালিশে প্রথম স্ত্রী উপস্থিত থাকতে পারবেন অথবা প্রতিনিধি পাঠিয়ে তাঁর বক্তব্য রাখতে পারবেন। দুই দিকের বক্তব্য বিবেচনায় রেখে সালিশি পরিষদ সিদ্ধান্ত দেবে, আবেদনকারী দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারেন কিনা। আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে, আপনার স্বামী আপনার কাছে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি চাননি এবং স্থানীয় পরিষদের কাছেও কোনো আবেদন করেননি। যদি তিনি সালিশি পরিষদের অনুমতি না নিয়েই দ্বিতীয় বিয়ে করে ফেলেন, তাহলে সে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন হবে না। তা ছাড়া আপনার স্বামীকে আপনার সব দেনমোহর তাৎক্ষণিকভাবে আদায় করতে হবে। আর আইন ভঙ্গ করে বিয়ে করার অপরাধে আপনি তাঁর বিরুদ্ধে পারিবারিক আদালতে মামলা অথবা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ৪৯৪ ধারায় ফৌজদারি মামলা করতে পারবেন। মামলার ভিত সত্য প্রমাণিত হলে অপরাধীর এক বছর কারাদণ্ড এবং দশ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে। আপনার সন্তান দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানের সঙ্গে আনুপাতিক হারে সম্পত্তির ভাগ পাবে। আপনার স্বামীর দায়িত্ব আপনার এবং সন্তানদের ভরণপোষণ। সেই দায়িত্ব যাতে তিনি নেন সেটা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে। আপনি আপনার স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে মেনে নিতে না পারলে ওই বিয়ে যে আইন ভঙ্গ করে হয়েছে, সেটার ব্যাপারে আদালতে মামলা করতে পারেন। অর্থাৎ আপনার মোহরানা, ভরণপোষণ এবং অন্য দাবি থাকলে সেগুলো চাইতে পারেন। একইসঙ্গে ফৌজদারি আইনেও বিচার চাইতে পারেন। আপনার স্বামী আপনাকে না জানিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করে একটি অন্যায় করেছেন। এই কাজের জন্য তাঁর শাস্তি প্রাপ্য। একইসঙ্গে আপনার জীবনের এই অপ্রত্যাশিত পরিবর্তনকে মেনে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যান। এ সময়ে মানসিকভাবে দৃঢ় থাকাটা ভীষণ জরুরি। মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে কিছুদিন কাউন্সেলিং নিলে আশা করা যায় এই ধাক্কাটা সামাল দিতে পারবেন।
আমাদের পেইজ- https://www.facebook.com/dailykhoborerdakgor/
আমাদের গ্রুপ- https://www.facebook.com/groups/dailykhoborerdakgor/
আমাদের ইউটিউব- https://www.youtube.com/channel/UC9r4_s-LK0mucm34GjjmZqg