প্রতিনিধি ২০ এপ্রিল ২০২৩ , ২:২৫:৩৬ প্রিন্ট সংস্করণ
ইসলামিক ডেস্ক:
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোনো জাতি জাকাত না দিলে তখন আসমান থেকে বৃষ্টিবর্ষণ বন্ধ করা হয়। যদি চতুষ্পদ জন্তু না থাকত তাহলে কখনো বৃষ্টিপাত হতো না।… [ ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২৫৯ ]
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি জাকাত। জাকাত পার্থিব জীবনে যেমন দারিদ্র্য মোচনে সহায়তা করে তেমনি পরকালের কঠিন দিনে স্বস্তি দেয়। ইরশাদ হয়েছে, তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা কোরো ও জাকাত দাও, তোমরা নিজেদের জন্য যেসব ভালো কাজ আগেই পাঠাবে তা আল্লাহর কাছে পাবে, তোমরা যা করো আল্লাহ তার দ্রষ্টা। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১১০)
জাকাত আদায় না করার শাস্তি:
কেউ জাকাতের বিধান অস্বীকার করলে সে মুসলিম থাকবে না। যথাযথভাবে জাকাত আদায় না করলে পরকালে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। নিম্নে কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত ইহকাল ও পরকালের কয়েকটি শাস্তির কথা উল্লেখ করা হলো—
পুঞ্জীভূত সম্পদ উত্তপ্ত করে শরীরে সেঁক : মহান আল্লাহ বলেন, এবং যারা সোনা ও রুপা জমা করে রাখে, তা আল্লাহর পথে খরচ করে না, আপনি তাদের বেদনাদায়ক আজাবের সুসংবাদ দিন। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে, অতঃপর তা দিয়ে তাদের কপালে, পার্শ্বদেশে ও পিঠে সেঁক দেওয়া হবে, (বলা হবে) এটা তা-ই, যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা রাখতে, অতএব তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ করো।
(সুরা তাওবা, আয়াত : ৩৪-৩৫)
সম্পদ হবে কৃপণের গলার বেড়ি : অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহর অনুগ্রহে প্রদত্ত সম্পদ নিয়ে যারা কৃপণতা করে তারা যেন এটাকে কিছুতেই কল্যাণকর মনে না করে, তারা যা নিয়ে কৃপণতা করে কিয়ামতের দিন তাই তাদের গলায় বেড়ি হবে, আসমান ও জমিনের স্বত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহর, তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তা বিশেষভাবে অবহিত।
(সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৮০)
বিষধর সাপের দংশন : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ যাকে সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু সে এর জাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে টাক (বিষের তীব্রতার কারণে) মাথাবিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দিয়ে তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার মুখের দুই পাশ কামড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত সম্পদ। অতঃপর রাসুল (সা.) ওপরে উল্লিখিত সুরা আলে ইমরানের আয়াতটি পাঠ করেন। (বুখারি, হাদিস : ১৪০৩)
তা ছাড়া হাদিসে পার্থিব জীবনে জাকাত না দেওয়ার কয়েকটি শাস্তির কথাও এসেছে। বুরাইদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে জাতি জাকাত দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে আল্লাহ সে জাতিকে দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত করেছেন। (বায়হাকি, হাদিস : ৬৬২৫)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের কাছে এসে বললেন, হে মুহাজিররা, তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার মুখোমুখি হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, যেন তোমরা তার মুখোমুখি না হও। কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়লে তাদের মধ্যে মহামারির মতো প্লেগ রোগ ও এমন ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে, যা তাদের আগে কখনো দেখা যায়নি। কোনো জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করলে তাদের ওপর দুর্ভিক্ষ, শাসকদের নিপীড়ন ও কঠিন বিপদ নেমে আসে। কোনো জাতি জাকাত না দিলে তখন আসমান থেকে বৃষ্টিবর্ষণ বন্ধ করা হয়। যদি চতুষ্পদ জন্তু না থাকত তাহলে কখনো বৃষ্টিপাত হতো না।… (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২৫৯)
তাই আসুন, আমরা হিসাব করে সঠিকভাবে জাকাত আদায় করি। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পরকালের কঠিন শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।